উন্নত জাতের ভেড়া পালনের পদ্ধতি


উন্নত জাতের ভেড়া পালনের পদ্ধতি গ্রাম বাংলার একটি ইতিহাস। ভেড়া পালন করাতে অল্প পুঁজিতে সীমিত আকারে শুরু করা যায়। তাছাড়া গ্রামীণ পরিবেশের ভেড়া পালন করার সহজ পদ্ধতি গুলো নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

উন্নত-জাতের-ভেড়া-পালনের-পদ্ধতি


আরও পড়ুন ঃগাড়ল ও ভেড়ার পার্থক্য

পেজ সূচপত্র ঃ

অল্প সময় কিভাবে ভেড়ার প্রজনন করা যায়

অল্প সময়ে ভেড়ার প্রজনন করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে উপযুক্ত একটি ভেড়া নির্বাচন করতে হবে। উপযুক্ত ভাড়া নির্বাচন করার পরে সঠিকভাবে তার যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কেন না ভালো জাতের এবং উপযুক্ত ভাড়া ছাড়া ভালো প্রজনন করা সম্ভব হয় না। তাই সর্বপ্রথম আপনাকে উপযুক্ত এবং ভালো জাতের একটি ভেড়া নির্বাচন করতে হবে যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই প্রজনন বৃদ্ধি করতে পারেন।

বাংলাদেশে প্রায় অনেক জাতের ভাড়া দেখতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে কিছু জাতের ভেড়া আছে যেগুলোর প্রজনন করার মাধ্যমে আপনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন। তাছাড়া ভেড়ার যদি জাত এবং সঠিক যত্ন নেওয়া যায় তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বংশবিস্তার করে ভেড়া করতে পারেন।

উন্নত জাতের ভেড়া পালনের পদ্ধতি

উন্নত জাতের ভাড়া পালন করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম ভেড়ার জাত চিনতে হবে। কারণ আপনি যদি ভেড়ার জাত সঠিকভাবে নির্বাচনের করতে না পারেন তাহলে আপনি ভেড়া পালন করতে পারবেন না। তাই সর্বপ্রথম আপনাকে ভাড়া প্রজনন করার জন্য একটি উন্নত জাতের ভেড়া সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত ভেড়ার রোগ বালাই কম হওয়ার কারণে ভেড়া পালন করা খুবই সহজ।

তাছাড়া গ্রাম গঞ্জের লোকজন ভেড়া পালনের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাছাড়া আরব দেশে দেশগুলোতে ভেড়া পালনের মাধ্যমে তাদের জীবিকা ও জীবন যাপন নির্ধারণ করে থাকে। কারণ একটি উন্নত জাতের ভেড়া আপনার জীবন পাল্টে দিতে পারে কারণ, ভেড়ার লোম বিক্রয় করে আপনি খুব অল্প সময়ে লাখ টাকা ইনকাম করতে পারেন। উন্নত জাতের ভেড়া পালনের পদ্ধতি জানালাটা জরুরি।

তাই সর্বপ্রথম আপনাকে একটি উন্নত জাতের ভেড়া নির্বাচন করতে হবে এবং তা পালন করতে হবে। আপনি উন্নত জাতের ভেড়া নির্বাচন করার মাধ্যমে ভেড়ার মাংস এবং লোম বিক্রয় করতে পারবেন।
আপনি উন্নত জাতের ভেড়ার সঙ্গে দেশী জাতের ভেড়ার বিষ দিয়ে ভেড়ার প্রজনন করতে পারবেন, এতে ফলাফল ভালো হয়। তাছাড়া বাংলাদেশের ব্লেক বেঙ্গল, ডোরপাড়া, গাড়ল ইত্যাদি জাত নির্বাচন করতে পারে।

বাংলাদেশে মোট কয়টি জাতের ভেড়া পাওয়া যায়

বাংলাদেশের অঞ্চল ভেদে প্রায় তিন ধরনের ভেড়া দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত এই ভেড়াগুলো গ্রামাঞ্চলে বেশি পরিমাণে পালন করা হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক যে তিন জাতের ভেড়া দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর নাম কি?
  • বরেন্দ্র অঞ্চলের ভাড়াঃ রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ ইত্যাদি অঞ্চলে বরেন্দ্র জাতের ভেড়া বেশি পরিমাণে পালন করা হয়ে থাকে।
  • যমুনা অববাহিকা ভেড়াঃ সিরাজগঞ্জ ,টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া, ইত্যাদি অঞ্চলে যমুনা অবিবাহিকা জাতের ভেড়া বেশি পরিমাণে পালন করা হয়ে থাকে।
  • উপকূলীয় অঞ্চলের ভাড়াঃ সাধারণত নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, হাতিয়া, চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলে এই জাতের ভেড়া বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়ে থাকে।

কই মাস পর ভেড়া বাচ্চা দেই 

ভেড়া সাধারণত বছরে তিনবার বাচ্চা দিয়ে থাকে। আপনি যদি একটি উন্নত জাতের ভেড়া পালন করতে চান তাহলে ভেড়া সম্পর্কে আপনার জানাটা জরুরী। কারণ ছাগলের তুলনায় ভেড়া পালন করাতে অধিক লাভের হার থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভেড়ার খামার গড়ে তুলেছে। একটি উন্নত জাতের ভেড়া পালন করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে।

আপনি সাধারণত একটি উন্নত জাতের ভেড়া সঙ্গে একটি দেশীয় জাতের ভেড়া সংযোজন করে ভেড়ার প্রজনন করতে পারেন। তাছাড়া ভেড়ার জাতভেদে ভেড়া বাচ্চা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে সাধারণত তিন জাতের ভেড়া দেখতে পাওয়া যায় এর মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল এবং ডোরপাড়া জাতের ভেড়া বছরে তিনবার করে বাচ্চা দিয়ে থাকে। এদের প্রতি বারে বাচ্চা তিন থেকে চারটা করে হয়ে থাকে।

তাছাড়া ভেড়া জাত গুলোর মধ্যে গাড়ল খুবই বড় জাতের হওয়ার কারণে দুইবার বাচ্চা দিয়ে থাকে। গারল সাধারণত দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে। গাড়ল আকারে অনেকটা বড় হওয়ার কারণে বেশি পরিমাণে লোকজন পালনের জন্য সঠিক স্থান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে।

ভেড়ার রোগো চিকিৎসা

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ ভেড়া পালন করে থাকে। সাধারণত অন্যান্য পশু তুলনায় ভেড়ার রোগ বালাই কম হওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে ভেড়া পালন করে থাকে। তাছাড়া ভেড়ার খাবার দাবারে সেরকম ঝামেলা করতে হয় না। সাধারণত ভাড়া বিলে চোরে চোরে খেয়ে থাকে। তাই গ্রাম অঞ্চলের মানুষ ভেড়া পালন করে থাকে।

সাধারণত ভেড়ার রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম রোগ হচ্ছে কৃমির, পিপিয়া, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ ইত্যাদি ধরনের রোগ বেড়ার প্রচুর পরিমাণ হয়ে থাকে। এই রোগের জন্য সাধারণত আগে থেকে চিকিৎসা নেওয়া টাই ভালো। কারণ পিপিয়া এবং চর্ম রোগের মত বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিলে ভেড়া বাঁচানোটাই দায় হয়ে পরে।

তাছাড়া ভেড়ার এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে খুব দ্রুত সময় আশেপাশের বস হাসপাতাল এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে খুব অল্প সময় ভেড়ার সেরে যায়। নিউমোনিয়া ও কৃমি রোগের জন্য আপনি সাধারণত পশু হাসপাতাল থেকে কৃমির ঔষধ এবং নিউমোনিয়ার ঔষুধ খাওয়ালে খুব দ্রুত সময় এগুলো সেরে ওঠে।

ভেড়া পালনের উদ্দেশ্য

ভেড়া পালনের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার সম্পত্তি বৃদ্ধি করতে পারেন। ভেড়া পালনের অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন ধরেন ভেড়া সাধারণত শুষ্ক অঞ্চলেও বসবাস করতে পারে। তাছাড়া ভেড়া আপনি যে কোন পরিস্থিতিতে রাখতে পারেন। সাধারণত ভেড়া পালনের মাধ্যমে আপনি খুব অল্প সময়ে আপনার ধন সম্পদ বাড়াতে পারে। কারণ ভেড়া লোম এবং ভেড়ার মাংস বিক্রয় করে আপনি খুব অল্প সময় বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

যেমন ধরেন মরুভূমি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ভেড়া পালন করা হয়ে থাকে। কারণ ভেড়া পালন করতে সেরকম একটা খরচ হয় না। তাছাড়া সিতাংশ অঞ্চলগুলোতে ভেড়া পালন করার জন্য খুবই উপযোগী। কারণ ভেড়া খুব শীতের মধ্যে নিজে শরীর নিয়ন্ত্রণে রেখে বেঁচে থাকতে পারে। তাছাড়া ভেড়া লোম দিয়ে আপনি নানা ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি করতে পারেন। এছাড়া ভালো ভেড়ার লোম বিক্রয় করে আপনি খুব অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

গ্রামীণ পরিবেশে ভেড়া পালনের পদ্ধতি

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ অঞ্চল গুলোতে ভেড়া প্রচুর পরিমাণে পালন করা হয়ে থাকে। গ্রামীণ পরিবেশে ভেড়া পালন করার অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। গ্রামীণ পরিবেশে ভেড়া পালনের সুবিধা এবং পদ্ধতি গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
উন্নত-জাতের-ভেড়া-পালনের-পদ্ধতি


  • ভেড়া পালন করতে সেরকম একটা খরচ না হওয়ার কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রচুর পরিমাণে ভেড়া চাষ করে থাকে।
  • সাধারণত বংশবিস্তার বেশি হওয়ার কারণে গ্রামীণ অঞ্চলের ভেড়া পালন করে থাকে।
  • ভেড়া পালন করতে সেরকম একটা খরচ হয় না।
  • তাছাড়া ভেড়া সব জায়গায় তার নিজের খাবার খেতে পারে, সেটা হোক পানিতে বা উপরে বা কোন শুষ্ক অঞ্চল।
  • গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ ভেড়ার লোম এবং মাংসের জন্য ভেড়া পালন করে থাকে।
  • ভেড়ার লোম দিয়ে নানা ধরনের জিনিসপাতি এবং শীতের জিনিস তৈরি করা হয়।
  • তাছাড়া উন্নত জাতের ভেড়া পালনের মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জন করা যায়।
  • বাংলাদেশের মোট ৬৪টি জেলার মধ্যে তিনটি জাতের ভেড়া বেশি পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়।

উন্নত জাতের কয়েকটি ভেড়ার নাম

সাধারণত বাংলাদেশে কয়েকটি জাতের ভেড়া প্রচুর পরিমাণে পালন করা হয়ে থাকে। ভেড়া পালন করাতে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ার কারণে এবং কোনরকম বাড়তি খরচ না হওয়ার কারণে গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভেড়া পালন করা হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি উন্নত জাতের ভেড়ার নাম। 
  • ব্ল্যাক বেঙ্গল
  • মেরিনো
  • সাউথ ডাউন
  • ডরপার 
  • বালুচি 
  • বেরিকন ডু চের
  • গাড়োল, ইত্যাদি। 

অল্প সময়ে ভেড়ার প্রজনন করে লাভবান

সাধারণত বাংলাদেশের দেশি ভেড়াগুলো ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে তাদের প্রজনন বৃদ্ধি করে থাকে। এই সময় তাদের শরীরের ওয়েট থাকে ১২ থেকে ১৪ কেজির মধ্যে। তাছাড়া একটি উন্নত জাতের ভেড়া যদি আপনি প্রজনন করতে চান তাহলে তার বয়স সাধারণত ৯থেকে ১২ মাসের মধ্যে হাওয়াটা জরুরী। কারণ একটি পাঁঠা ভেড়া তার প্রজনন দেওয়ার জন্য ওয়েট থাকতে হবে ২০ থেকে ২৫ কেজির মধ্যে।

আপনি যদি অল্প সময়ে ভেড়ার প্রজনন করে লাভবান হতে চান তাহলে আপনাকে উন্নত জাতের একটি মেরি ও উন্নত জাতের একটি ভেড়া সংগ্রহ করে তাদের প্রজনন বৃদ্ধি করতে পারে। এবং অল্প সময়ের মধ্যে লাভবান হতে পারেন। কারণ একটি উন্নত জাতের ভেড়ার সঙ্গে যদি উন্নত জাতের মেরির সংযম করা যায় তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বংশবিস্তার করে আপনি লাভবান হতে পারেন। তাছাড়া আপনি যদি একটি ভেড়া পটার সঙ্গে গাড়লের সম্মান করতে পারেন তাহলে এতে ফলাফল অনেকটাই ভালো দেখা যায়।

উপসংহারঃ

পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নত জাতের ভেড়া পালনের পদ্ধতি এবং নানান জাতের ভেড়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া অল্প সময়ে কিভাবে ভেড়া পালন করে লাভবান হতে পারেন সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । আরও আলোচনা করা হয়েছে ভেড়ার রোগ ব্যাধি এবং নানান ধরনের বিষয় সম্পর্কে।

আমার মত আপনি যদি একটি উন্নত জাতের ভেড়া পালন করতে চান তাহলে আপনার জন্য ভালো হয়। কেননা আপনি যদি উন্নত জাতের ভেড়া চিনতে না পারেন তাহলে আপনি কখনোই লাভবান হতে পারবেন না। তাই ভেড়া পালন করার আগে ভেড়ার জাত চেনাটা জরুরী।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url