গাড়ল ও ভেড়ার পার্থক্য
গাড়ল ও ভেড়ার পার্থক্য এটা আমাদের জানা দরকার। আমরা যারা পশু পালন করে থাকি তারা সকলেই ভেড়া এবং গাড়লের মধ্যে পার্থক্য কি এ বিষয়টা নিয়ে অনেক আলোচনা শোনা যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ভাড়া এবং গাড়লের মধ্যে পার্থক্য টা কোথায় সে সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে মাশরুম চাষের পদ্ধতি
পেজ সূচি পত্রঃ
- গাড়ল ও ভেড়ার পার্থক্য
- বাংলাদেশে ভেড়ার জাত
- গাড়ল ও ভেড়া একই সাথে চাষ করা যায়
- ভেড়ার একটি উন্নত জাতের নাম
- ভেড়ার মাংস খাওয়ার উপকারিতা
- বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া এবং গাড়ল চাষ
- ভেড়া এবং গাড়ল চাষ করতে কি রকম খরচ হয়
- গাড়ল এবং ভেড়ার দাম কত
- গাড়ল এবং ভেড়ার রোগ ও চিকিৎসা
- উপসংহারঃ
গাড়ল ও ভেড়ার পার্থক্য
গাড়ল এবং ভেড়ার মধ্যে পার্থক্য বলতে আমরা সাধারণত গাড়লকে অনেক বড় হতে দেখা
যায়। আর ভেড়া আকারে ছোট হয় আমরা খুব সহজে চিনতে পারি। সাধারণত গাড়লের লেজ
অনেক বড় হয়। আর ভেড়ালে ছাগলের লেজের মত ছোট হয়ে থাকে। তবে গাড়ল এবং
ভেড়া দেখতে একই রকম হয় আমরা মাঝেমধ্যে কনফিউজ হয়ে যায় কোনটা গাড়ল এবং কোনটা
ভেড়া। গাড়ল ও ভেড়ার পার্থক্য তুলে ধরা হলোঃ
গাড়লঃ
- গাড়ল পালন লাভজনক একটি ব্যবসা।
- কারণ গাড়ল চোরে খেতে পছন্দ করে।
- গরু কিনবা ছাগলের মতো একটা কোন খাবার তৈরি করে দিতে হয় না গাড়লের জন্য।
- ভেড়ার তুলনায় গাড়ল অনেকটাই বড় হয়ে থাকে।
- গাড়ল সাধারণত বছরে দুইবার বাচ্চা দিয়ে থাকে।
- গাড়ল অতি তাড়াতাড়ি বংশবিস্তার করতে পারে।
- গাড়ল পালনে অল্প লাভে বেশি পুঁজির আশা করা যায়।
- যে কোন পরিস্থিতিতে গাড়ল পালন করা যায়।
- গাড়ল প্রতিবারে এক থেকে দুইটা বাচ্চা দিয়ে থাকে।
ভেড়াঃ
- ভেড়া পালন একটি লাভজনক ব্যবসা।
- কারণ ভেড়া গাড়লের মত চুরি খেতে পছন্দ করে।
- ভেড়া কেউ গরু কিনবা ছাগলের মত এক্সট্রা কোন খাবার তৈরি করে দিতে হয় না।
- গাড়লের থেকে ভেড়া তুলনামূলক অনেকটাই ছোট হয়ে থাকে।
- ভেড়া সাধারণত বছরে তিনবার বাচ্চা দিয়ে থাকে।
- ভেড়া গাড়লের মতো অতি তাড়াতাড়ি বংশবিস্তার করে থাকে।
- ভেড়া পালনে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশা করা যায়।
- যে কোন পরিস্থিতিতে ভেড়া পালন করা যায়
- প্রতিবারে সাধারণত দুইটা থেকে তিনটা বাচ্চা দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশে ভেড়ার জাত
বাংলাদেশের সাধারণত কয়েকটি যাদের ভাড়া দেখা যায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায়
ভেড়া খামার তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তাছাড়া ভেড়া পালনে অন্যরকম
বাড়তি কোনো খরচ না হওয়ায় খুব সহজেই ভেড়া পালন করা যায়। ভেড়ার মাংসের
সুস্বাদু হওয়ার কারণে বাজারে এটি খুবই চাহিদা রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া
যাক বাংলাদেশ ভেড়ার জাত গুলোর নাম কি কি?
আরও পড়ুনঃ রাজশাহীর সকল ট্রেনের নতুন সময়সূচী
- দেশি ভাড়াঃ
- ডরপার ভাড়াঃ
- মধুপুর ভেড়াঃ
- ব্রিজেড ভেড়াঃ
- বালুচি ভেড়াঃ
- আফ্রিকান ভেড়াঃ
- ব্রাজিলিয়ান ভেড়াঃ
- অস্ট্রেলিয়ান সাদা ভাড়াঃ
- বর্ডার লিসেস্টারঃ
- বেরিকন ডু চেরঃ
- বোরে ভেড়াঃ
- অনন্য জাতের ভেড়াঃ
পৃথিবীতে প্রায় একশটির উপরে ভেড়ার জাত আছে, এর মধ্যে কয়েকটি ভেড়ার জাতের
তালিকা তুলে ধরলাম। ভেড়া পালন করাতে অনেক লাভবান হওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে মাংস
উৎপাদন করার কারণে বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছোটখাটো ভেড়ার খামার তৈরি করেছে।
এছাড়া ভেড়া পালন করাতে কোন ধরনের বাতি খরচ করতে হয় না। রোগ বালাই কম হওয়ার
কারণে ভেড়া পালন করা খুবই সহজ।
গাড়ল ও ভেড়া একই সাথে চাষ করা যায়
বর্তমান সময়ে কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব সহজে গাড়ল ও ভেড়া একই সাথে চাষ করা
সম্ভব। কারণ গাড়ল ভেড়া পালন করায় সেরকম খরচ না হওয়ার কারণে একত্রে চাষ করা
সম্ভব। সাধারণত গাড়ল এবং ভাড়া আমাদের মাংসের চাহিদা পূরণ করে থাকে। ঠিক
সেই কারণে আমরা এই ধরনের পশু পালন করে থাকে। একই সাথে গাড়ল এবং ভেড়া চাষ করার
অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে।
- যেমন ধরেন গাড়ল ও ভাড়া একত্রে সকল ধরনের খাবার খেয়ে থাকে।
- গাড়ল ও ভেড়ার বংশবিস্তার অনেক বেশি।
- গাড়ল এবং ভেড়া চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
- গা ভেড়া এবং গাড়ল পালনে খরচ খুবই কম।
- গাড়ল ভেড়া রোগবালায় অনেক কম হয়ে থাকে।
ভেড়ার একটি উন্নত জাতের নাম
ভেড়ার একটি উন্নত জাতের নাম হল মেরিনো ভেড়া। সাধারণত মেরিনো জাতের ভেড়া, তার
প্রশম উৎপাদনের জন্য খুবই বিখ্যাত। মেরিনো জাতের ভেড়ার পশম দিয়ে উন্নত মানের
পোশাক তৈরি করা হয়ে থাকে। তাছাড়া মেরিনো জাতের ভেড়ার পশমের বিশ্ববাজারে অনেক
চাহিদা থাকার কারণে বিশ্বের প্রায় অনেক দেশে মেরিনো জাতের ভেড়ার বাণিজ্যিকভাবে
খামার গড়ে তুলেছে।
তাছাড়া মেরিনো জাতের ভাড়া আকারে অনেক বড় হওয়ার কারণে অন্যান্য ভেড়ার তুলনায়
তাদের মাংস উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত একটি জাত। তাছাড়া মেরিনো জাতের ভেড়ার
লোম দিয়ে নানা ধরনের জিনিসপত্র এবং পোশাক-আশাক তৈরি করা হয়ে থাকে। এ জাতের
ভেড়া সাধারণত পশম উৎপাদনের জন্য খামার করা হয়ে থাকে।
ভেড়ার মাংস খাওয়ার উপকারিতা
বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত ভেড়ার মাংসে এক ধরনের গন্ধ থাকে তাই তেমন একটা পছন্দ
করে না। কিন্তু গবেষণা দেখা গেছে ভেড়ার মাংস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের পেশী
এবং টিস্যু মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া ভেড়ার মাংস খাওয়ার মাধ্যমে
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। বাংলাদেশ
ব্যতীত প্রায় বিশ্বের নানান দেশে ভেড়ার মাংস উৎপাদন করার জন্য বিখ্যাত।
ভেড়ার মাংসের পুষ্টিগুণ এবং গুণাগুণ সম্পর্কে জানাটা আমাদের জরুরি। তাছাড়া
ভেড়ার মাংসের পাশাপাশি ভেড়ার দুধ খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের নানান ধরনের
পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। ভেড়ার মাংস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কর। আমাদের শরীরের মাংসপেশী এবং টিস
মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া ভেড়ার মাংসের খনিজ পদার্থ এবং পুষ্টির
গুনাগুন অনেকটা বেশি।
বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া এবং গাড়ল চাষ
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সহকারে বাইরের দেশগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া এবং গাড়লের
চাষ করে আসছে। বিশ্বে পায় 50 টারও বেশি ভেড়া জাত দেখতে পাওয়া যায়। ভেড়া
শুধুমাত্র লোম এবং মাংস উৎপাদনের জন্য চাষ করা হয় না। বরঞ্চ ভেড়ার দুধ দিয়ে
তৈরি নানান ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য তৈরি করা হয়ে থাকে।
তাছাড়া ভেড়া এবং গাড়ল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য তেমন একটা খরচ না
হওয়ার কারণে অল্প পুঁজির মাধ্যমে এগুলো খামার তৈরি করা সম্ভব।গাড়ল এবং ভেড়া
সাধারণত বাংলাদেশের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়ে
থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সাধারণত পশু পালনের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
বাণিজ্যিকভাবে গাড়ল এবং ভেড়া চাষ করার মাধ্যমে খুব সহজে আপনি অল্প পুঁজির
মাধ্যমে এগুলো খামার তৈরি করতে পারেন। ভেড়া এবং গাড়ল চাষ করতে তেমন একটা খরচ না
হওয়ার কারণে খুব সহজে আপনি লাভবান হতে পারেন। তাছাড়া এগুলোর বংশবিস্তার অনেকটাই
বেশি অন্যান্য পশু তুলনা।
ভেড়া এবং গাড়ল চাষ করতে কি রকম খরচ হয়
সাধারণত ভাড়া এবং গাড়ল চাষ করতে তেমন একটা খরচ হয় না। এগুলোর জন্য এক্সট্রা
কোন খাবার তৈরি করতে হয় না বা কিনতে হয় না। ভেড়া এবং গাড়ল সাধারণত জোরে জোরে
খাবার খেতে পছন্দ করে। এগুলোকে একটি স্থানে রেখে দিলে তারা নিজের থেকে খাবার
খুঁজে বের করে খেয়ে থাকে। ভেড়া এবং গাড়ো সাধারণত ঘাস জাতীয় খাবার গুলো পছন্দ
করে থাকে।
ভেড়া এবং গাড়ল চাষ করার মাধ্যমে আপনি অল্প সময়ে লাভবান হতে পারবেন। কারণ
এগুলোর
রোগ বালাই কম হয়ে থাকে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায়। তাই খুব সহজে আপনি ভেড়া এবং
গাড়ল চাষ করতে পারবেন। তাছাড়া ভেড়া এবং গাড়ল চাষের জন্য আপনাকে এক্সট্রা করে
কোন কিছু তৈরি করতে বা খামার তৈরি করতে হয় না। এগুলো একত্রে একই স্থানে থাকতে
পারে।
গাড়ল এবং ভেড়ার দাম কত
বর্তমান সময়ে দেখলে আপনি অবাক হবেন যে, প্রত্যেক বছর কুরবানীতে অন্যান্য পশুর
তুলনায় ভেড়া এবং গাড়ল বেশি পরিমাণে কুরবানী দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ অন্যান্য
পশু তুলনায় এগুলোর মূল্য অনেকটা কম থাকার কারণে খুব সহজে আপনি কুরবানী সহ
নানান ধরনের অনুষ্ঠানে এগুলো মাংস ব্যবহার করতে পারেন।বর্তমান সময়ে ভেড়া এবং
গাড়লের নানান জাত দেখা যায়। এগুলোর তুলনায় এগুলোর ওজন এবং হাইট অনুযায়ী দাম
হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ রাজশাহী টু ঢাকা বাসের সময়সূচী
- ভেড়াঃ একটি ভেড়ার দাম সাধারণত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে।
- গাড়লঃ একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাড়লের দাম ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে, ওজন ভেদে।
গাড়ল এবং ভেড়ার রোগ ও চিকিৎসা
অন্যান্য পশু তুলনায় ভেড়া এবং গাড়লের রোগ অনেকটা কম হয়ে থাকে। কারণ তারা
নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। ভেড়া এবং গাড়ল চাষের জন্য এটি
খুবই বড় একটি উৎস কারণ, এদের রোগ বালাই খুবই কম। তাছাড়া আপনার খামারে যদি
গাড়ল অথবা ভেড়ার রোগ দেখা দিয়ে থাকে তাহলে তার জন্য আপনাকে আশেপাশের পশু
হাসপাতালে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে।
গাড়ল এবং ভেড়ার খুবই অল্প পুঁজিতে বেশি লাভবান হওয়ার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন
দেশে ভেড়া এবং গাড়লের খামার গড়ে তুলছে। খামার তৈরি করার আগে তারা তাদের রোগ
এবং চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত নিয়েই খামার তৈরি করছে। ভেড়া এবং গাড়লের যদি কোন
ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনার আশেপাশের পশু হাসপাতাল এবং ডাক্তারের সঙ্গে
পরামর্শ করে খুবই তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
উপসংহারঃ
পরিশেষে বলা যায় যে, গাড়ল ও ভেড়ার পার্থক্য বলতে আমরা বুঝি গাড়ল আকারে
অনেকটা বড় হয় এবং তাদের লেজ অনেকটা বেশি লম্বা হয়। আর ভেড়া সাধারণত আকারে
গাড়লের থেকে ছোট হয় এবং তাদের লেজ ও অনেকটাই ছোট। তাছাড়া ভেড়া এবং গাড়ল
চাষের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে অল্প পুঁজি ইনভেস্ট করে লাভবান হতে পারবেন। কারণ
এদের রোগ বালাই অনেকটাই কম। আর এদের লোম বিক্রি করে কোটি টাকা আয় করা যায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url