কৈ মাছ এর চাষের পদ্ধতি

কৈ মাছ এর চাষের পদ্ধতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় বিষয় নিয়ে আজকের এ পোস্টটি লেখা হয়েছে। তাছাড়া আপনারা জানতে পারবেন কিভাবে উন্নত জাতের কই চাষ করার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। অল্প সময়ে কৈ মাছ চাষ করার সহজ পদ্ধতিগুলো আলোচনা করা হবে।

কৈ-মাছ-এর-চাষের-পদ্ধতি


আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে মাশরুম চাষের পদ্ধতি

পেজ সূচিপত্রঃকৈ মাছ এর চাষের পদ্ধতি 

কৈ মাছ চাষের সহজ পদ্ধতি

কৈ মাছ চাষ করার সহজ পদ্ধতি হলো, সর্বপ্রথম আপনাকে একটি পকুর কিংবা খাল নির্বাচন করতে হবে। তারপর আপনাকে দেখতে হবে পকুর কিভাবে খালে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ করা যায় কিনা। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ করা যায় তাহলে সেই পুকুরটি নির্বাচন করুন এবং দেখতে হবে পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পড়ে কিনা। যদি পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পড়ে তাহলে বুঝতে হবে এই পুকুরে কৈ মাছ চাষ করার জন্য উপযুক্ত।

সে পুকুর কিংবা খালে সর্বপ্রথম আপনাকে প্রস্তুত করার জন্য চুন কিংবা সার দিয়ে উপরে পানি পরিষ্কার করে নিতে হবে। চুন অথবা সার পানিতে দেওয়ার পরে পাঁচ থেকে সাত দিন পর আপনার পানি যখন ক্লিয়ার হয়ে যাবে তখন আপনি কৈ মাছের পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়তে পারেন। তারপরে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে ওই মাসের পোনা গুলোর খাবার সঠিক পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে কি না।

তাছাড়া মাছের নানান ধরনের অসুখ হয়ে থাকে সে অনুযায়ী মাছ খাবার এবং অসুখের জন্য কেমিক্যাল প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে খুব সহজে আপনি কৈ মাছ চাষ করতে পারবেন। সাধারণত একটি হাই করে ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর বেশি করে ওজন ১০০ থেকে ১৫০গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

কৈ মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করা

আমাদের দেশে সাধারণত কয়েকটি যাত্রা কৈ মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। কয়েকটি জাতের কৈ মাছের মধ্যে থাইল্যান্ডের কৈ মাছ এবং দেশীয় কয় মাসের চাহিদা বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এ মাছগুলোর চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে একটি পুকুর কিংবা ডোবা প্রস্তুত করতে হবে। আপনি যদি উন্নত জাতের কৈ মাছ চাষ করতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে পুকুর কিংবা ডোবা প্রস্তুত করাট জরুরী।

কৈ মাছ চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে একটি পুকুর নির্বাচন করতে হবে। দেখতে হবে পুকুরের আশেপাশে কোন গাছপালা আছে কিনা, এবং পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পড়ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ আপনার পুকুরে যদি সূর্যের আলো পর্যন্ত পরিমাণে পড়ে তাহলে সেই পুকুরে কৈ ,শিং এবং মাগুর জাতীয় মাছ গুলো চাষ করার জন্য প্রস্তুত।

কৈ মাছ চাষ করার জন্য আগে থেকে পুকুরে পানি পরিষ্কার করার জন্য সর্বপ্রথম পুকুরে চুন অথবা সার প্রয়োগ করে পুকুরের পানি পরিষ্কার করে নিতে হবে। তার ১০ থেকে ১৫ দিন পরে ওই মাসের পোনা সংগ্রহ করে সেই পুকুরে ছাড়তে হবে। তাছাড়া পুকুর নির্বাচন করার সময় দেখতে হবে পুকুরে আশে পাশে কোন ছায়া আছে কিনা । যদি পুকুরে ছায়া থাকে তাহলে সেই পুকুরে কৈ মাছ চাষ করার জন্য প্রস্তুত নয়।

কৈ মাছের পোনা সংগ্রহ করা

কৈ মাছের পোনা সংগ্রহ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। আপনি যদি পুকুর প্রস্তুত না থাকে তাহলে আপনি কৈ মাছের পোনা সংগ্রহ করে কোন লাভ হবে না। সাধারণত কৈ মাছের পোনা প্রাকৃতিক নিয়মে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া হ্যাচারি নিয়মে আজকাল কই মাছের পোনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকছে। ওই মাছের পোনা সংগ্রহ করার জন্য কিছু নিয়ম আপনাকে মনে রাখতে হবে যেমন ধরেন।
  1. উনার উৎস
  2. পুকুর প্রস্তুত করা
  3. কৈ মাছের পোনা ধরানো আকার
  4. পোনা ছাড়ার আগে পরীক্ষা
  5. পোনা রোগ বালাই নির্ধারণ করা
  6. খাদ্য ব্যবস্থাপনা
  7. পোনা ছাড়ার আগে করনীয়
  8. পোনা মজুদ করা নিয়ম, ইত্যাদি বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে।

কৈ মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য করণীয়

কৈ মাছ চাষ করার সময় আপনাকে সর্বপ্রথম খেয়াল রাখতে হবে আপনি যে স্থানে মাছ চাষ করছেন সেই স্থানের পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পড়ে কিনা। আর মাছ উৎপাদন করার আগে আপনাকে মাসের পোনা ধরন এবং আকার নির্ধারণ করে পুকুর কিংবা ডুবে ছাড়তে হবে। যদি আপনি নির্দিষ্ট আকারে পোনা না ছাড়েন তাহলে আপনার উৎপাদন বৃদ্ধি হতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে।

কৈ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য, মাছের পর্যন্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করা যায় এবং মাছ এর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যায় তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কৈ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

কৈ মাছের ওজন কিরকম হয়ে থাকে

আমাদের দেশে সাধারণত কয়েকটি জাতের কৈ মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। আমরা সাধারণত গ্রাম অঞ্চলের মানুষগুলো দেশীয় জাতের কৈ গুলো বেশি পরিমাণে পছন্দ করে থাকে। সাধারণত দেশীয় জাতের কইগুলো ওজন হয়ে থাকে১০০ থেকে১৫০ গ্রাম পর্যন্ত। আর বিদেশী জাতের কই গুলোর ওজন হয়ে থাকে সর্বনিম্ন সাই.৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত।

বিদেশী জাতের কৈ মাছ গুলোর ওজন সর্বোচ্চ হলে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। যদি সঠিক খাবার এবং সঠিক আদ্রতায় চাষ করা যায়। তাছাড়া বিদেশী জাতের কৈ গুলো থেকে দেশি জাতের কৈ গুলো খেতে অনেক সুস্বাদু।

বাণিজ্যিক ভাবে থাই কৈ চাষের পদ্ধতি

বাণিজ্যিকভাবে কৈ মাছ চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে একটি পুকুর নির্বাচন করতে হবে ।এবং কৈ মাছের পোনা নির্দিষ্ট আকারে সংগ্রহ করে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট আকারের সংগ্রহ করে রাখার পরে পোনা গুলো পুকুরে ছাড়তে হবে এবং নিয়মিত খাবার দিতে হবে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। সাধারণ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য থাই কৈ উপযুক্ত।

তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবে কই চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে পোনা সংগ্রহ করে তা মজুদ করে রাখতে হবে। সাধারণত বাংলাদেশ বাণিজ্যিকভাবে থাই কৈ চাষ করা উপযুক্ত। কারণ কৈ মাছে তেমন একটা খরচ না হওয়ার কারণে খুব সীমিত আকারে আপনি একটি পুকুরে ওই মাছ চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারেন।

তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য থাই কৈ খুবই উপযুক্ত কারণ, বাংলাদেশের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে থাই কৈ চাষ করা সম্ভব। কৈ মাছ চাষ করাতে এমন একটা খরচ হয় না। আর কৈ মাছ পুষ্টিগুণ এবং অনেক সুস্বাদু ।

কোন কোন স্থানে কৈ মাছ চাষ করা যায়

সাধারণত বাংলাদেশের যে কোন স্থানে কৈ মাছ চাষ করা যায়। কৈ মাছ সাধারণত বাংলাদেশের দেশীয় জাতীয় একটি মাছ, এটি সাধারণত গ্রাম-গঞ্জের খাল বিল এবং নানান ধরনের ডুবাই দেখতে পাওয়া যায়। অন্যান্য মাছের তুলনায় কৈ মাছের জান অনেক শক্ত হওয়ার কারণে খুব সহজে এ মাছ দেখতে পাওয়া যায়।

আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে কৈ মাছ চাষ করতে চান তাহলে আপনার জন্য খুবই সুসংবাদ। কারণ বাংলাদেশের যেকোনো পরিবেশে ওই মাছ চাষ করা যেতে পারে। সেটা হোক খাল বিল কিংবা পুকুর। কৈ মাছ সাধারণত অন্যান্য মাছের সাথে একত্রে চাষ করা সম্ভব। তাই অন্যান্য মাছকে যেরকম খাবার দেওয়া হয় ওই একই খাবারে কৈ মাছ চাষ করা যায়।

কৈ মাছ চাষ করতে কি রকম খরচ হয়ে থাকে

সাধারণত কৈ মাছ চাষ করতে তেমন একটা খরচ হয় না। কারণ অন্যান্য মাছের সঙ্গে একত্রে কৈ মাছ চাষ করা সম্ভব। কৈ মাছ চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে নির্দিষ্ট আকারে কৈ মাছের কোন সংগ্রহ করতে হবে। তারপরে আপনার পুকুর খাল কিংবা ডুবাই খুব সহজে কৈ মাছ চাষ করতে পারবেন। বর্তমানে এখন বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে কৈ মাছের চাষের ট্রেনিং দেওয়া হয়ে থাকে।

সাধারণত কৈ মাছ চাষ করতে আপনার পুকুর এবং মাছের আকার অনুযায়ী পোনা সংগ্রহ করতে হবে এবং। আপনার যে স্থানে কৈ মাছ চাষ করবেন কিছুদিন পর পর তার পানির টেম্পারেচার পরীক্ষা করাটা জরুরী। কই মাছ চাষ করতে সাধারণত অতি একরপতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার মত খরচ হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে কৈ মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে অনেক অর্থ প্রদান করা যায়।

কৈ ,সিং ও মাগুর মাছ একত্র চাষের পদ্ধতি

একটি পুকুরে আপনি যদি কৈ মাছ চাষ করতে চান। তার সঙ্গে সঙ্গে আপনি আরো কিছু মাছ একত্রে চাষ করতে পারেন যেমন ধরেন শিং এবং মাগুর। শিং এবং মাগুর মাছ দেখতে পায় সেম সেম হলেও দুটি আলাদা আলাদা জাতের মাছ।কৈ সিং এবং মাগুর মাছ হিংসে প্রজাতির হওয়ার কারণে এ প্রজাতির মাছ গুলো একত্রে চাষ করা যায়।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৈ মাছ এর সঙ্গে সঙ্গে মাগুর শিং মাছ একত্রে চাষ করা হয়। কৈ মাছের মত শিং মাছের অনেক চাহিদা থাকার কারণে বাণিজ্যিকভাবে এখন শিং মাছের পোনা সংগ্রহ করে কুকুর দেওয়া এবং খাল মিলে শিং মাছের চাষ করা হয়ে থাকে।

তাছাড়া দেশীয় জাতের মাগুর মাছগুলো বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়ে থাকে। দেশীয় জাতের মাগুর মাছ তেমন একটা বড় না হওয়ার কারণে যেকোনো পরিবেশে এদেরকে চাষ করা সম্ভব। এই তিন জাতীয় মাছকে চাষ করতে হলে কোন রকম খরচ ছাড়াই এবং কোনরকম কষ্ট ছাড়াই চাষ করা সম্ভব হয়ে থাকে।

কৈ মাছ চাষে লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায় যে, কৈ মাছ এর চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া কৈ মাছ দেশীয় জাতের মাছ হওয়ার কারণে খুব অল্প খরচে এই মাছ চাষ করা যায়। আর যেকোনো পরিস্থিতিতে কৈ মাছ চাষ করে আপনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url