জাফরানের ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা


জাফরান (Saffron) পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মসলা হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত Crocus sativus ফুলের শুকনো স্তিগমা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর রঙ, গন্ধ ও স্বাদের কারণে জাফরান শুধু রান্নায় নয়, ঔষধি ও সৌন্দর্যচর্চাতেও ব্যবহৃত হয়।
জাফরানের-২০-টি-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

পেজ সূচিপত্রঃ

জাফরানের ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা

জাফরানের ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা | জাফরান খাওয়ার নিয়ম, গুণ ও সতর্কতা
ভূমিকাজাফরান (Saffron) পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মসলা হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত Crocus sativus ফুলের শুকনো স্তিগমা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর রঙ, গন্ধ ও স্বাদের কারণে জাফরান শুধু রান্নায় নয়, ঔষধি ও সৌন্দর্যচর্চাতেও ব্যবহৃত হয়।

তবে, অনেকেই জাফরানের উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও এর অপকারিতা বা সতর্কতা সম্পর্কে সচেতন নন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানবো জাফরানের ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা, সাথে থাকবে খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ।
জাফরানের-২০-টি-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

জাফরানের ২০টি উপকারিতা

  1. মানসিক প্রশান্তি আনেঃজাফরান সেরোটোনিন হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যা মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  2. ঘুমের সমস্যা দূর করেঃযারা অনিদ্রায় ভোগেন, তারা দুধের সাথে সামান্য জাফরান মিশিয়ে রাতে পান করলে ঘুমের মান বৃদ্ধি পায়।
  3. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়কঃজাফরান রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  4. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃএর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়।
  5.  ত্বক উজ্জ্বল করেঃজাফরান ত্বকের কালচে ভাব দূর করে, ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল করে তোলে। ফেস প্যাকে ব্যবহার করলে ব্রণ ও দাগ কমে যায়।
  6. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃনিয়মিত জাফরান সেবন মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।
  7. মাসিকের ব্যথা উপশমে কার্যকরঃমহিলাদের মাসিকের ব্যথা ও অস্বস্তি দূর করতে জাফরান দুধ খুবই উপকারী।
  8. গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারীঃগর্ভাবস্থায় সামান্য জাফরান খেলে হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে, মুড ভালো থাকে এবং শিশুর ত্বকও সুন্দর হয় (তবে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি)।
  9.  হজমে সাহায্য করেঃজাফরান পেটের গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও হজমজনিত সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
  1. চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করেঃজাফরানে থাকা ক্যারোটিনয়েড চোখের রেটিনা সুরক্ষিত রাখে, বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
  2. ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেঃজাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি র‍্যাডিকেল ধ্বংস করে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিকে বাধা দেয়।
  3. যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃপ্রাচীনকাল থেকেই জাফরানকে প্রাকৃতিক কামোদ্দীপক হিসেবে ধরা হয়। এটি যৌন দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করে।
  4. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করেঃনিয়মিত জাফরান খেলে শরীরের রক্তপ্রবাহ সচল থাকে, ফলে শরীর সতেজ অনুভূত হয়।
  5. ঠান্ডা ও কাশি দূর করেঃজাফরান দুধ গরম করে খেলে গলা ব্যথা, কাশি ও ঠান্ডা দ্রুত সারিয়ে তোলে।
  6.  প্রদাহ কমায়ঃজাফরানে থাকা ক্রোসিন ও সাফ্রানাল প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে, যা জয়েন্ট পেইন ও আর্থ্রাইটিসে উপকার দেয়।
  7. লিভার সুস্থ রাখেঃএটি লিভারের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
  8. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃজাফরান ইনসুলিন উৎপাদনে সহায়তা করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  9. চুল পড়া রোধ করেঃজাফরান ও দুধের মিশ্রণ মাথায় লাগালে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
  10. বার্ধক্য বিলম্বিত করেঃঅ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর জাফরান ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করে, ফলে বয়সের ছাপ দেরিতে পড়ে।
  11. শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করেঃঅ্যাজমা, কাশি বা অ্যালার্জিজনিত শ্বাসকষ্ট কমাতে জাফরান সহায়ক ভূমিকা রাখে।

জাফরানের ১০টি উপকারিতা

যদিও জাফরানের অসংখ্য গুণ রয়েছে, তবুও অতিরিক্ত বা ভুলভাবে গ্রহণ করলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে উল্লেখ করা হলো এর ১০টি প্রধান অপকারিতাঃ
  1. অতিরিক্ত সেবনে বিষক্রিয়া হতে পারেঃঅতিরিক্ত জাফরান (প্রতিদিন ৫ গ্রাম বা তার বেশি) সেবনে বমি, মাথা ঘোরা বা এমনকি বিষক্রিয়া হতে পারে।
  2. গর্ভপাতের ঝুঁকিঃগর্ভবতী নারীরা বেশি জাফরান খেলে জরায়ুর সংকোচন হতে পারে, যা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
  3. রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারেঃযাদের রক্তচাপ সাধারণত নিচু থাকে, তারা জাফরান বেশি খেলে মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন।
  4.  অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়াঃকিছু মানুষের শরীরে জাফরান অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, যেমন চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্ট।
  5. ঘুম ঘুম ভাব ও ক্লান্তিঃঅতিরিক্ত জাফরান স্নায়ু শান্ত করে ঘুম ঘুম ভাব ও অতিরিক্ত ক্লান্তি আনতে পারে।
  6. রক্তপাতের ঝুঁকিঃরক্ত পাতলা করার ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন) ব্যবহারকারীরা জাফরান খেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  7. হরমোনের ভারসাম্য নষ্টঃঅতিরিক্ত সেবনে শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা প্রজনন সমস্যার কারণ হতে পারে।
  8. ত্বকে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিঃকিছু মানুষের ত্বকে জাফরান লাগালে পোড়া বা জ্বালাভাব হতে পারে।
  9. শিশুদের জন্য ক্ষতিকরঃছোট শিশুদের জাফরান খাওয়ানো উচিত নয়, কারণ তাদের হজমক্ষমতা দুর্বল থাকে।
  10. মাথা ব্যথা ও মাইগ্রেনঃঅতিরিক্ত সেবনে স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা হতে পারে।

জাফরান খাওয়ার সঠিক নিয়ম

  • প্রতিদিনের মাত্রাঃ দিনে ২–৩টি স্টিগমা (প্রায় ০.০২ গ্রাম) যথেষ্ট।
  • দুধের সাথেঃ ১ কাপ কুসুম গরম দুধে ২টি জাফরান স্টিগমা ভিজিয়ে রেখে পান করুন।
  • খালি পেটে নয়ঃ খাবারের পরে খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • বাহ্যিক ব্যবহারঃ ত্বকের জন্য দুধ ও মধুর সাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

জাফরান কেনার সময় সতর্কতা

বাজারে অনেক ভেজাল জাফরান পাওয়া যায়। আসল জাফরান পানিতে ভিজালে ধীরে ধীরে রঙ ছাড়ে, সাথে হালকা মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়।খুব দ্রুত রঙ ছড়ালে বুঝবেন সেটি নকল।বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড থেকে জাফরান কিনুন।
জাফরানের-২০-টি-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

উপসংহারঃ

জাফরান সত্যিই এক আশ্চর্য ভেষজ মসলা, যা শরীর ও মনের জন্য অসংখ্য উপকার বয়ে আনে। তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত সবকিছুই ক্ষতিকর— তাই পরিমিত পরিমাণে জাফরান সেবন করা উচিত।

সঠিকভাবে ব্যবহার করলে জাফরান আপনাকে দেবে সুস্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও মানসিক প্রশান্তি আর অতিরিক্ত ব্যবহার করলে আনতে পারে বিপদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url